ভেন্টিলেটর যন্ত্রের তিনটি প্রটোটাইপ না নমুনা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য সরকারের আইসিটি বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে দেশের প্রথম সারির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মঙ্গলবার বিকেলে যন্ত্রগুলো এক অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বুঝে নেন। নমুনাগুলো বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। মানব দেহে সেগুলো সঠিকভাবে কাজ করলেই আগামী জুন নাগাদ উৎপাদন শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হস্তান্তরের সময় আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ওয়ালটন তিনটি মডেলের প্রটোটাইপ জমা দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মেডট্রনিকের ডিজাইনে করা। আর বাকি দুটি তাদের নিজস্ব উদ্ভাবন। আমরা তিনটি প্রটোটাইপকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে আগামী কাল (আজ বুধবার) হস্তান্তর করব। এরপর তারা সেগুলো প্রটোকল মেনে রোগিদের দেহে স্থাপন করা হবে। যদি সেগুলো সঠিকভাবে কাজ করে তবে প্রথমে পরীক্ষামূলক দুয়েক’শ ভেন্টিলেটর উৎপাদন করা হবে। এরপর প্রয়োজনে বাণিজ্যিকভাবেও উৎপাদনে যেতে পারে কোম্পানিটি।
তিনি বলেন, ওয়ালটন অঙ্গীকার করেছে যে তারা শুধু যন্ত্রের উৎপাদন খরচই রাখবে। সে হিসেবে এটি বিশ্বে উৎপাদিত অন্য ভেন্টিলেটরের চেয়ে দামে অনেক কম হবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। তবে ওয়ালটনের প্রটোটাইপই দেশে প্রথম নয় বলে এক প্রশ্নের জবাবে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত কতগুলো প্রটোটাইপ স্বাস্থ্য অধিপদপ্তরে জমা পড়েছে তা জানা নেই। তবে আমরা সবাইকে সমানভাবে সহযোগিতা করছি। ইতোমধ্যে মাইওয়ান একটা ভেন্টিলেটর মডেল উপস্থাপন করেছে। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) একটা করেছে। সশস্ত্র বাহিনী একটা করেছে। আমাদের এটুআই ইনোভেশন ল্যাব ১৮টি মডেলের প্রটোটাইপ বানিয়েছে।
বিভিন্ন ল্যাব, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ টি প্রটোটাইপ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারাই আসছে তাদের আমরা সুপারিশপত্র দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। কিন্তু কেউ জমা দিয়েছে কি-না বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ছাড়পত্র পেয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়ালটনের কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ জানান, কবে নাগাদ তারা উৎপাদনে যেতে পারবেন তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ, মেডট্রনিকের নকশা অনুযায়ী ভেন্টিলেটরে এমন কিছু কম্পেনেন্ট ব্যবহার করা হয় যা বিশ্বে দুয়েকটি কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ বানায় না। আমরা মেডট্রনিকের সহায়তায় সেসব কমপোনেন্ট আনার চেষ্টা করছি। তবে ওয়ালটনের বাকি দুইটি প্রটোটাইপে নিজস্ব টেকনোলেজি, নিজস্ব সোর্স ও আউট সোর্স ব্যবহার করা হয়েছে। আগামী মে মাসের শেষে বা জুনের শুরুতে প্রয়োজনীয় কিছু কমপোনেন্ট দেশে আসবে। তারপর পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যেতে পারব। তবে এর আগে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার ধাপ অতিক্রম করতে হবে বলে জানান তিনি। এতে অনেক পরিবর্তন বা সংযোজনও আসতে পারে।
তিনি জানান, মেডট্রোনিকের ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ওয়ালটনের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম নিজেরা বাকি দুটি মডেল তৈরি করেন। মূলত ভেন্টিলেটরে তিন ধরণের সিস্টেম থাকে। একটা হচ্ছে রোগী নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারলে যন্ত্রের সহায্যে তার ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছানো বা এসিস্টেড কন্ট্রোল। আরেকটা এসআইএমবি মুড, যাতে রোগি কিছুটা শ্বাস নিতে পারেন, এবং বাকিটা যন্ত্রের সাহায্যে দেয়া হয়। এর বাইরে একটা নেবুলাইজারসহ সিস্টেম। ওয়ালটনের মডেলগুলোতে শুধু নেবুলাইজার সিস্টেমটা দেয়া হয়নি শুধু। কারণ করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ সিস্টেম দরকার নেই। তবে মডেলগুলো আইসিইউতে কাজ করবে বলে আশাবাদি তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় , মেডট্রনিকের পিবি-৫৬০ মডেলের ডিজাইনে বানানো ওয়ালটনের ভেন্টিলেটরটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ডব্লিউপিবি ৫৬০’। আর তাদের দুটি মডেলের নাম দেয়া হয়েছে ‘ওয়ালটন কোভিড ভেন্টিলেটর ২০২০’ বা ‘ডব্লিউসিভি-২০’ এবং অন্যটি ‘ডব্লিউএবি-২০’।