কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে প্রবাসীদের বা বিদেশিদের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খোলা অনিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব বা ননরেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টের (এনএফসিডি) সুদের হার বাড়ানোর ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে এ হিসাবের সুদের হার ব্যাংকগুলোই নিজেরা নির্ধারণ করতে পারবে। তারা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এ হার বাড়াতে পারবে। আগে এ হার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করত।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদেরও জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রবাসী বা বিদেশিদের দেশের ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রায় সঞ্চয় করতে এনএফসিডি হিসাব চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ হিসাবে লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) ইউরো মুদ্রার ছয় মেয়াদী বন্ডের সুদের হারের সমান সুদ দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ সুদের হার উঠানামা করে। সাধারণত আগে এক থেকে দেড় শতাংশ থাকত। যে কারণে সঞ্চয়কারীরা আমানতের বিপরীতে সুদ কম বা বেশি পান। বর্তমানে ইউরোর মুদ্রার মান কমে যাচ্ছে। একইসঙ্গে সুদের হারও কমে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে এ হার শূন্যে নেমে এসেছে। যে কারণে এ হিসাবে প্রবাসীরা আর বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করতে পারছেন না। যারা আগে করেছেন তারাও অনেকে তুলে নিচ্ছেন। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এনএফসিডি হিসাবের সুদের হার ব্যাংকগুলোকে নির্ধারণের ক্ষমতা দিয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে এ হিসাবে সুদের হার নির্ধারণ করতে পারবে। ফলে তারা চাহিদা অনুযায়ী প্রবাসীদের রেমিট্যান্সও সংগ্রহ করতে পারবে।
ইউরোর সুদের হার কমে গেলেও ডলারের সুদেও হার বেড়েছে। পাউন্ডের সুদের হার কমে গেলেও এখনো তা ইতিবাচক। তবে ইউরোর সুদের হার শূন্যে নেমে এসেছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি এর সুদের হার সামান্য বাড়ালেও বাজারে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। ডলারের সুদের হার দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে এখন ডলারের চাহিদা বেশ তুঙ্গে। এই সুবিধা শুধু প্রবাসীরাই পাবেন না। বাংলাদেশে কার্যরত বিদেশি নাগরিক, কোম্পানি, ফার্মও পাবে। এগুলোতে কর্মরত কর্মীরাও এ সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) ও হাইটেক পার্কে সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোও এ সুবিধা পাবে। তবে হিসাব খুলতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়।
সাম্প্রতিককালে রেমিট্যান্স কমে ও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশের রিজার্ভে চাপ পড়েছে। এ কারণে রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পদক্ষেপ নিয়েছে।