আজ পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জয়ন্তী। করোনা মহামারির অভিঘাতে পৃথিবী আজ ধুঁকছে। এই সময়ে কবিগুরুর গান, কবিতা, সাহিত্য মানুষের মনে সাহস জোগায়, মনকে শান্ত করে।
রবিঠাকুর বাঙলির মানসপটে সদাই বিরাজমান। বাঙালির জীবনের যত ভাবনা, বৈচিত্র্য আছে; তার পুরোটাই লেখনী, সুর আর কাব্যে তুলে ধরেছেন কবিগুরু। তার সাহিত্যকর্ম, সঙ্গীত, জীবনদর্শন, মানবতা, ভাবনা- সবকিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা দেয়। কবিগুরুর ১৫৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১২৬৮ বঙ্গাব্দের (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) আজকের দিনে। মা সারদাসুন্দরী দেবী এবং বাবা বিখ্যাত জমিদার ও ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৭৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাতৃবিয়োগ ঘটে।
পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশ ভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অবস্থান করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। শৈশবে তিনি কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নরম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
৮ বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশে ইংল্যান্ড যান। সেখানে ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন তিনি। পরের বছর ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়েই দেশে ফিরে আসেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৮৩ সালের ভবতারিণীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী।
এর মধ্যেই চলতে থাকে তার সাহিত্যচর্চা। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভ‚ম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তি নিকেতনে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের চূড়ান্ত সোপানে। বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভ‚ষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে।
কর্মসূচি :
করোনা সংক্রমণের এই সময়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে জনসমাগম হয় এমন কোনো আয়োজন থাকছে না। তবে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটালি রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের জন্য একটি অনুষ্ঠান ধারণ করেছে। ধারণকৃত এই অনুষ্ঠানটি আজ সকাল ১০টায় দেশের বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা হবে। এছাড়া ‘ওই মহামানব আসে’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ছায়ানট। রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন সকাল সাড়ে ৯টায় ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাবে এটি।
রবীন্দ্রজয়ন্তীতে আইজিসিসি’র বিশেষ আয়োজন :
বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার (আইজিসিসি)। ভারতীয় হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রবীন্দ্রনজয়ন্তী উপলক্ষে ‘ট্রিবিউট টু রবীন্দ্রনাথ ট্যাগোর : এ রে অব হোপ থট ট্যাগোরস ফিলোসফি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে আইজিসিসি। অনুষ্ঠানটি রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন, অর্থাৎ আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আইজিসিসি’র ফেসবুক পেজে সম্প্রপ্রচার করা হবে।
এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, ভারতের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক এবং অনুবাদক অধ্যাপক ফখরুল আলম এবং ভারতের অনুবাদক ও গবেষক অধ্যাপক রাধা চক্রবর্তী। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত থাকবেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনসের (আইসিসিআর) সভাপতি ড. বিনয় সহস্রবুদ্ধি। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার ড. রীভা গাঙ্গুলি দাশ। ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের ফেসবুক পেইজ https://www.facebook.com/IndiraGandhiCulturalCentre/