আবারো ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

বিশ্বকবির ১৫৯তম জন্মজয়ন্তী

পরের সংবাদ

বিশেষ সাক্ষাৎকার

একটা আত্মকেন্দ্রিক ব্যাপার ঘটে চলেছে সমাজে

ঢাকা স্কাই নিউজ

প্রকাশিত: মে ১২, ২০২০ , ৭:৫৭ অপরাহ্ণ

বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, যিনি রনবী নামেই খ্যাত। অসাধারণ রসবোধ, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সঙ্গে সমাজসচেতনতা ও নান্দনিক বোধের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমন্বয়ে আমাদের চিত্রকলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন তিনি। জনপ্রিয় কার্টুন সিরিজ ‘টোকাই’ তার অনবদ্য সৃষ্টি। দীর্ঘ ৫০ বছরে চারুশিল্পের নানা শাখা-প্রশাখায় বীরদর্পে বিচরণ করছেন তিনি। ড্রয়িং, ছাপচিত্র, জল রং, তেল রং ও অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে কাজ করার পাশাপাশি বইয়ের প্রচ্ছদ, অলংকরণ, পোস্টারসহ অনেক ধরনের ব্যবহারিক শিল্পকর্মের চর্চাও করছেন।

করোনাকাল কেমন কাটছে? ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে শিল্পকলা জগতের অনন্য মুখ রফিকুন নবী বলেন, আর সবার যেভাবে কাটছে, আমারও তাই কাটছে। এটা একটা অপ্রত্যাশিত বাজে সময়। চারদিকে মানুষ রোগী হয়ে যাচ্ছে, মৃত্যুও হচ্ছে, এসব চিন্তা মাথায় ঢুকলে কিছুই আর ভালো লাগে না। তারপরও ঘরে বসে বসে করোনা নিয়ে কিছু ছড়া লিখছি। ছবি আঁকার চেষ্টা করছি। কিন্তু নিজের মনপুত হচ্ছে না। মন ভালো না থাকলে কিছুতেই তা হবে না। দুশ্চিন্তা নিয়েই কাটছে সময়। পরিবারের ছেলে-মেয়েরা অনেকেই বাইরে থাকে, তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তাতেই থাকি। এই অবস্থার মধ্যে সিরিয়াসলি ছবি আঁকা হচ্ছে না। তবে পড়াশোনা করছি। বেশিরভাগই শিল্পকলাকেন্দ্রিক। করোনা নিয়েও কাজ করার পরিকল্পনা আছে। কিন্তু আমি ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে কিংবা মানুষকে ব্যথিত করে এমন কোনো কাজ করতে পারি না।

করোনার অভিঘাতে কতটা বদলাল বিশ্ব এবং বাংলাদেশ? এই প্রশ্নের উত্তরে রনবী বলেন, আগে যেসব মহামারি দেখেছি, সেসব আঞ্চলিক ছিল। কোনো দেশ বা ওই দেশের কোনো অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু অন্য মহাদেশকে আক্রান্ত করত না। কিন্তু এই প্রথম আমার দেখার অভিজ্ঞতায় একটা ভাইরাস ভয়ঙ্করভাবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেল। ধনী দেশ গরিব দেশ, ভালো দেশ পাজি দেশ কাউকেই বাদ দেয়নি। প্রচণ্ডভাবে ভীতিকর একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করল। এটা কি প্রকৃতি থেকে নাকি মনুষ্য সৃষ্টি- এটা বিজ্ঞানীরাই ভালো বলতে পারবে।

করোনার এই অভিঘাতে সারা বিশ্বেই একটা অর্থনৈতিক খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করবে। বড় কোনো দুর্গতি আসলেই আমাদের মতো ছোট দেশগুলো দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে যায়। এবারো যে সেটা আসবে না তা বলা যায় না। আরেকটা দিক দেখি, এই যে মধ্যপ্রাচ্যে এতো বোমাবাজি যুদ্ধ-বিগ্রহ চলছিলই। এই ভাইরাস আসায় সব দিকেই এসব বন্ধ হয়ে গেছে। যেই দেশগুলো এসবে জড়িত থাকে তারা এসবে আক্রান্ত হওয়ায় এসবের দিকে মনোযোগের সময় নাই। ওইদিক দিয়ে একটা পরিবর্তন আসল। এর মধ্য দিয়ে বোঝাই যাচ্ছে- খুব বানোয়াট মানসিকতা থেকেই এই যুদ্ধগুলো হয়। তেল নিয়ে, পাওয়ার নিয়ে, কারা নেতৃত্বে থাকবে এসব নিয়েই তো যুদ্ধ হয়। ভাইরাসের কাছে সব ডাউন।

আমাদের মনোজগতে করোনার কী প্রভাব দেখছেন? এর জবাবে বিশিষ্ট এই শিল্পী বলেন, একটা আত্মকেন্দ্রিক এবং স্বার্থপর ব্যাপার ঘটে চলেছে সমাজে। আমি বাঁচব, এমনটাই বেশি বেশি ভাবা হচ্ছে। তাতে করে আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতার রূপটা ভেসে উঠছে। যার করোনা হয়, তার ধারেকাছে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পরিবার কেউ থাকতে পারে না! এমন একটা জঘন্য ভাইরাস। তাতে করে আমাদের মানবিকতা, পারিবারিক বন্ধন এসব লোপ পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে আমার। তাতে করে ভয়াবহ মানসিক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে বলে আমার ধারণা।