বিশেষ সাক্ষাৎকার
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বরেণ্যে অভিনেতা। অভিনয়ের সব মাধ্যমেই তার অবাধ পদচারণা। প্রখ্যাত এই অভিনেতা দেশমাতৃকার মুক্তির প্রয়োজনে একদিন জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। রণাঙ্গনের অতুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক। একাধারে একজন নাট্যকার, আবৃত্তিকার, সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। চলচ্চিত্র উন্নয়নেও রয়েছে তার বিশেষ ভূমিকা। তার মননশীল কলাম ও ভাবনা পাঠককে আবিষ্ট করে এবং ভাবায়। আপাদমস্তক মানবিক ও প্রগতিশীল এই সংস্কৃতিপ্রাণ মানুষটি মনের আনন্দে শিশুতোষ ছড়াও লিখেছেন অসংখ্য এবং লিখেছেন কবিতাও। তিনি বর্তমানে একুশে টেলিভিশনের সিইও হিসেবে কর্মরত।
তার মতে, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে মহাকাব্যিক অধ্যায়। তিনি প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে যা কিছু করেন এবং করছেন এর সবকিছুই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দর্শন এবং আদর্শকে সম্পৃক্ত করেই করেন। তার মতে, একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে তার জীবনের সব কিছুতেই মহান মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র স্পর্শ স্পষ্ট লেগে থাকে। তার সঙ্গে থাকে সৌহার্দ ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন।
বিশিষ্ট এ শিল্পীর করোনাকাল কেমন কাটছে জানতে চাইলে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, করোনাকাল সবার যেভাবে শঙ্কায় কাটছে আমারও তেমনি কাটছে। সুযোগ পেলেই পড়ছি আর কলাম লিখছি। কিছু ছড়া ও কবিতার খসড়াও করছি। ১৯৭১ সালে আমি যে ঘর থেকে বেরুলাম, সেই ঘর থেকে বেরুনোর পরে আবার যে ঘরে ফিরলাম, সেই পুরো সময়টাকে স্মৃতিকথার মতো করে ধরবার চেষ্টা করছি। একটা জার্নি থেকে মানুষ অনেক কিছু দেখবে। এছাড়া আমার তো এখন দুটো অফিস। ইটিভি আর সম্প্রীতি বাংলাদেশ। সারাদিন অফিস এবং সম্প্রীতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্নজনের খোঁজখবর নিতে হচ্ছে।
প্রত্যেক সপ্তাহে সারা পৃথিবীর এক্সপার্টদের নিয়ে প্রতি বুধবার আর শনিবার এক ঘণ্টার ভার্চুয়াল মিটিং করি। আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জেলা উপজেলার স্কুল-কলেজ এবং উপশহরে গিয়ে যে সম্প্রীতি সংলাপ করতাম সে প্রোগ্রামটা এখর আর ফিজিক্যালি করতে পারছি না। সেটাই আমরা এখন ভার্চুয়ালি বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিকভাবে করছি। যাদের জানানোর ইচ্ছা থাকে তারা জানে। এর মধ্যে আমরা বুদ্ধপূর্ণিমা নিয়ে করেছি। যেখানে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেনা এবং সমাজনীতি শীর্ষক আলোচনা করেছি। এরপর রবীন্দ্রজয়ন্তী করেছি। এরপর করোনার প্রতিষেধক নিয়ে করেছি। এর সঙ্গে আমেরিকা, ভারত এবং বাংলাদেশ মিলে তিনটি দেশের কিছু এক্সপার্ট সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। যারা বৈজ্ঞানিক চর্চা এবং ওষুধের প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা করেন, তারা যুক্ত হয়েছিলেন। ভালো একটা প্রোগ্রাম হয়েছে। সম্প্রীতি বাংলাদেশের ফেসবুকে এটা লাইভ হয়।
এর মধ্যে পড়ছেন কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়িতে অনেক পড়ার বই জমে আছে। সব তো আর পড়া হয় না। তবে এর মধ্য থেকে রাজনীতি আর সমাজনীতির বইগুলো পড়ছি। করোনা পরবর্তীকালে পৃথিবীতে বিশালাকারে সমাজ এবং অর্থনীতির পরিবর্তন আসছে। আমাদের সামাজিক সংস্কৃতি ও অর্থনীতি এবং মানুষের (বিহেবিয়ার প্যাটার্ন) প্রাত্যহিক আচরণের অনেক পরিবর্তন হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। সেই বিষয়গুলো নিয়ে লেখাগুলো পড়ে বুঝবার চেষ্টা করি। আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং উপমহাদেশের রাজনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে- কি হতে পারে তা নিয়ে আমার আলাদা ইন্টারেস্ট আছে। সেটা নিয়ে পড়ার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করছি, ঘোলা জলে মাছ শিকার করার মানুষের তো অভাব নেই। এ দুঃসময়ের মধ্যেও অনেকে ঘোলা জলে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করছে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে এসব আমরা দেখছি। তাদের গতিবিধি কী হচ্ছে, সেটাও গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করছি।
করোনাকালে আপনার চেনা পৃথিবীর কতোটা পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে পীযূষ বলেন, একেবারে ভিন্ন জগতে আমরা পৌঁছে গেছি। কোনো মিলই খুঁজে পাচ্ছি না। মিল খোঁজার চেষ্টা করাও ভুল হবে। যে জগতের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল, এখনকার যে জগৎ সে জগতের সঙ্গে একেবারেই পরিচয় ছিল না। আমরা স্প্যানিশ ফ্লু, প্ল্যাগ কিংবা ইবোলার কথা শুনেছি। এখন আমরা জীবন থেকে শেখছি।
বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কী না- জানতে চাইলে বিশিষ্ট এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এটা আমাদের জাতীয় চরিত্র। এটা দু-চার-দশ বছরের কাহিনী নয়, এটা শত শত বছরের চরিত্র। নিকট-অতীতেও দেখেছি, বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য এবং সাহস রাখে। সুদূর অতীতেও দেখেছি বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আবারো ঘুরে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, আরেকটা অভাবনীয় পরিবর্তন দেখছি- সেটা হচ্ছে গাছগুলো সবুজ থেকে সবুজতর হচ্ছে, যেন মখমলের গালিচা বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। পাখি ডাকছে, নতুন পাখি, পুরনো পাখি।