স্যাটেলাইট ডেটা দিয়ে করোনার রহস্য বের করবে নাসা!

আগের সংবাদ

ডিজিটালি রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন

পরের সংবাদ

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব করা দরকার

বিপ্রদাশ বড়ুয়া

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২০ , ৭:১২ অপরাহ্ণ

বিশেষ সাক্ষাৎকার
বিপ্রদাশ বড়ুয়া
সাহিত্যিক ও নিসর্গী

বিপ্রদাশ বড়ুয়া। একজন নিসর্গী। বাংলার চারণ-সাহিত্যিক। প্রকৃতির টানে তিনি ঘুরে বেড়ান দেশময়। ভালোবাসেন দেশের মাটি, মানুষের কাছে যেতে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন নিসর্গ-প্রকৃতি, পাখি ও জীব-জগত আর মানুষ। ব্যক্তিমানুষ, সামাজিক সত্তা, তার জীবনযাত্রা, হর্ষ, আনন্দ, বিষাদ সব মিলিয়েই তার সংগ্রাম, সংগ্রাম প্রকৃতি রক্ষার। বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে তার পথচলার গল্পটা যেন অনেকদিনের! চট্টগ্রামের ইছামতি গ্রাম থেকে উঠে আসা এই মানুষটির কাছ থেকে বাংলা সাহিত্য এখন পর্যন্ত পেয়েছে ১৪০টিরও বেশি অমূল্য সম্পদ। ভ্রমণ, গবেষণা, গল্প, উপন্যাস ও প্রকৃতিবিষয়ক প্রায় ১৪০টি বই লিখেছেন। এই বহুমাত্রিক লেখকের করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখন গৃহবন্দি। আয়েশ করে লিখছি পড়ছি। এর মধ্যে ‘প্রকৃতিও প্রতিশোধপরায়ণ’-এ নামে একটা গল্পও লিখলাম। লিখতে গিয়ে মনে হলো মানুষের সবকিছু তো নিয়ন্ত্রণ করছে প্রকৃতি। আগে বন জঙ্গলে থাকত মানুষ। সেখান থেকে এখন ঘরবাড়ি করেছে, দালান কোঠা করেছে, প্রতিবেশী গড়েছে প্রকৃতির সঙ্গে। আর এখন যত পারছি সেই প্রকৃতিকে আমরা মারছি। মারতে গিয়ে প্রকৃতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে।

আপনার কি মনে হচ্ছে প্রকৃতিকে মানুষই রাগিয়ে দেয়ার কারণে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে? এর জবাবে এই নিসর্গী বলেন, অবশ্যই। করোনা ভাইরাস এতদিন লুকিয়েছিল সবার অন্তরালে। এলো কি করে? বন জঙ্গল থেকে বাদুরের মাধ্যমে মানুষই নিয়ে এসেছে। আমরা নদীকে বাঁধ দিচ্ছি। বাধ কি রাখতে পেরেছি? প্রকৃতি হচ্ছে আমাদের অংশ। প্রকৃতির সমস্ত কিছু আমরা উপভোগ করছি। চাষবাস থেকে শুরু করে সবই করছি। অথচ আমরা পৃথিবী বাসের অযোগ্য করে ফেলেছি। অথচ প্রকৃতি ছাড়া আমাদের বাঁচা সম্ভব নয়। কোনো অবস্থাতেই নয়। যে কারণে করোনা মহামারি এসেছে। এখন অন্য গ্রহেই আমাদের বাড়ি করা দরকার। নয়তো প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব করা দরকার। বন্ধুত্ব করেই প্রকৃতির সঙ্গে সহবাস করা দরকার। বন্ধু হিসেবে তার কি চাহিদা তা কী ইচ্ছা মানুষকে তা-ই খুঁজে বের করতে হবে। নইলে প্রকৃতির রুদ্ররোষ দেখাবে। সামুদ্রিক ঝড় আসবে, দাবানল আসবে। এ সমস্ত কিছুর পেছনে প্রকৃতির সঙ্গে আমরা সহবাস না রূঢ় আচরণ করছি। আগে তো প্রকৃতি এমন ছিল না। তাই সামঞ্জস্যতা রেখে পরস্পর নির্ভরশীলতা থাকতে হবে। কারণ প্রকৃতি ছাড়া মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। অথচ প্রকৃতিকে ভালো না বেসে আমরা তাকে বশে আনতে চাই। মানুষ যদি তাকে বেঁচে থাকায় বাধা দেয়, সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। তাকে মায়ের মতো সমীহ ও ভালোবাসা, বোনের মতো আদর-সোহাগ মানুষ যদি না দেয় এবং সহিষ্ণু না হয় তা হলে করোনার চেয়ে ভয়ঙ্কর ভাইরাস আসবে।

তিনি বলেন, প্রকৃতির ওপর গায়ের জোরে প্রভুত্ব করতে গিয়ে মানুষ তার ভুল বুঝতে পেরেছে মাত্র কিছুকাল আগে। এজন্য চতুর মানুষ এখন প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ শুরু করেছে। তিনি বলেন, আজকের মানুষ কৃষিজ ফসলের অচ্ছেদ্য অংশ নদী-খাল-বিল-পুকুর অবিবেচকের মতো শাসন করছে। অথচ সুপ্রাচীন কাল থেকে মানুষ জেনে গেছে নদী তাদের পরম বন্ধু, সভ্যতার অচ্ছেদ্য সঙ্গী। পৃথিবীর সব আদি সভ্যতা নদীকেন্দ্রিক। প্রাচীন কাল থেকে তাই মানুষ নদীর নাব্যতা নিয়ে চিন্তা করেছে। আস্তে আস্তে প্রাকৃতিকভাবে নদী নাব্য হারাতে বসলে বা গতি পরিবর্তন করতে থাকলে মানুষ গভীরভাবে লক্ষ্য করেছে।

বিশিষ্ট এই লেখক বলেন, দুঃখ-দারিদ্র্য-হতাশার কথা ভাবতে ভাবতে আমাদের চিন্তায়ও এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য গাছপালার সৌন্দর্য ও সুষমার কাছে আমি আশ্রয় খুঁজি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশিষ্ট এই সাহিত্যিক আরো বলেন, আমাদের দেশে সেলুন বা শপিংমল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু কোনো একটি ওষুধের দোকান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়। বহু ওষুধ আছে তার গায়ে লেখা আছে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে। ঢাকায় গ্রীষ্মকালে ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করে। দেশজুড়ে প্রায় একই অবস্থা। তাহলে অধিকাংশ ওষুধের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা তো বিশ্বাস নিয়ে এসব খাচ্ছি!
করোনার কারণে চেনা পৃথিবীর কতটা বদল ঘটল বলে মনে করেন জানতে চাইলে বিপ্রদাশ বড়ুয়া বলেন, আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল আমার দৈনন্দিন জীবন। ভাইরাসের জন্য। ভাইরাস কে এনেছে? মানুষ ছাড়া কে করেছে এসব? অথচ করোনা আসার আগে সকালে রাস্তায় যেতাম হাঁটতে, ছাদে যেতাম, আগে ঘরের দরজায় পত্রিকা দিয়ে যেত। এখন একেবারে গেট লক করে দিয়েছি। গেটের বাইরে গিয়ে পত্রিকা আনতে হচ্ছে। কারণ করোনা মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।