সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আলে সৌদ পরস্পর বিরোধী মন্তব্যে একদিকে দাবি করেছেন রিয়াদ ইয়েমেনে যুদ্ধ অবসানের চেষ্টা করছে অন্যদিকে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসন ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসেবে যে ঘোষণা দিয়েছে তাকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন।
আর প্রায় দুই মাস পর ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রাসনের ছয় বছর পূর্ণ হবে। সৌদি এই আগ্রাসন একবিংশ শতাব্দির সবচেয়ে বিপর্যয়কর আগ্রাসন হিসেবে চিহ্নিত। সৌদি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ইয়েমেনের এক লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে কয়েক লাখ এবং ৪০ লক্ষ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েমেনে যুদ্ধ অবসানের জন্য তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, আমেরিকার নতুন সরকার তাদের হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে এবং এ লক্ষে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে চলমান সৌদি আগ্রাসনের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের নীতি পুনর্মূল্যায়ন করতে চায়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সাবেক ট্রাম্প প্রশাসন ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ সংগঠনকে যে সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল সে বিষয়টি আবারও খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে এবং দ্রুত এ ব্যাপারে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গেরি সিগ বলেছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রথম থেকেই ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আগ্রাসনের বিরোধী ছিলেন এবং এখন তিনি এই যুদ্ধ অবসানের চেষ্টা করছেন। তিনি আরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স যদি সৌদি আরবের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়া বন্ধ করে তাহলে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা সৌদি আরবের থাকবে না।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কোন কোন মার্কিন কর্মকর্তার এ ধরনের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় ইয়েমেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের ব্যাপারে মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে এবং অন্যদিকে রিয়াদের ওপর আন্তর্জাতিক সমাজের চাপ বৃদ্ধি নিয়ে সৌদি সরকার উদ্বেগে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এ কারণেই সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েমেন যুদ্ধ অবসানের তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, তারা ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি চান কিন্তু আনসারুল্লাহ যোদ্ধারা যুদ্ধবিরতি মানছে না। আবার একই সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আনসারুল্লাহকে সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তার প্রতি তিনি সমর্থন জানিয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বোঝা যায় ইয়েমেন যুদ্ধের ব্যাপারে তারা চরম বিড়ম্বনার মধ্যে রয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে সৌদি সরকার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য আনসারুল্লাহ যোদ্ধাদেরকে দায়ী করছে অথচ এটা সবারই জানা আছে যে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে বারবার ইয়েমেনের উপর হামলা চালাচ্ছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী একদিকে আনসারুল্লাহকে সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির মার্কিন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্যদিকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবসানের কথাও বলছেন যা পরস্পর বিরোধী অবস্থান ও বিস্ময়কর। কেননা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হলে সৌদিকে অবশ্যই আনসারুল্লাহর সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। সূত্র : পার্সটুডে