ইয়েমেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়ার পর এখন তথ্য গত বিষয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে। ৬৯ মাস ধরে চলে আসা যুদ্ধে মূল ভূমিকা রেখেছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু সাম্প্রতিক গত প্রায় এক বছর ধরে বিভিন্ন বিষয়ে আবুধাবি ও রিয়াদের মধ্যেকার মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইয়েমেনের ভেতরে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে মূলত এই বিরোধ।
ইয়েমেন যুদ্ধের সময় যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে আমিরাত ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রতিযোগিতা ততোই বাড়ছে। কারণ দুই দেশই ইয়েমেনে তাদের প্রভাব বিস্তার ও কৌশলগত অবস্থান জোরদার করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরব যদিও প্রথম থেকেই ইয়েমেনে আমিরাতের প্রভাব বিস্তারের বিরোধিতা করে আসছিল কিন্তু এই যুদ্ধে আমিরাতের সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল বলে এতদিন সৌদি আরব এ বিষয়ে চুপচাপ ছিল।
ইয়েমেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে রিয়াদ ও আবুধাবির মধ্যে বিরোধ থাকলেও এখন এই দেশটিতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত চায় ইয়েমেনের পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদির মন্ত্রিসভায় আমিরাতপন্থী সদস্যদের উপস্থিতি বজায় থাকুক। কিন্তু মানসুর হাদি ও সৌদি আরব আমিরাতের এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। এ অবস্থায় আমিরাত সরকার ইয়েমেনে আমিরাতের সমর্থিত অন্তর্বর্তী পরিষদ গঠন করে এবং ইডেনের ক্ষমতাচ্যুত গভর্নরকে এই পরিষদের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করে।
বর্তমানে ইয়েমেনে আমিরাত সমর্থিত অন্তর্বর্তী পরিষদ শুধু যে সৌদি সমর্থিত ও পদত্যাগকারী প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয়েছে তাই নয় একইসঙ্গে এই পরিষদ এমন পরিষদ গঠন করেছে যা রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে সৌদি আরবের প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে দক্ষিণ ইয়েমেনে সৌদি-আমিরাত পন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে এতে উভয় পক্ষেরই অনেক অনুচর হতাহত হয়েছে।
তথ্যগত ক্ষেত্রেও আমিরাত ও সৌদি আরবের মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা দিয়েছে। খালিজ অনলাইনের এক প্রতিবেদনে আমিরাত ও সৌদি আরবের মধ্যে তথ্যগত গোপন বিরোধ শুরু হওয়ার কথা জানিয়ে লিখেছে, সৌদি সেনা কমান্ডাররা এই সামরিক জোটের সদস্যদের তথ্য বিনিময় বিষয়ক নীতিমালা পুনমূল্যায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তথ্য বিষয়ক বৈঠকে আমিরাতের অংশ গ্রহণের বিষয়টি পুনমূল্যায়ন করা উচিত।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি কমান্ডারদের এ বক্তব্য থেকে ইয়েমেন ইস্যুতে আবুধাবি ও রিয়াদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ ও অনাস্থার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই অনাস্থার মাত্রা এতটাই বেশি যে সৌদি গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে আমিরাতের গোয়েন্দা সংস্থা সৌদি সমর্থিত সরকারের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
এদিকে এ বিরোধের ফলে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আমিরাত ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরব থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে এবং রিয়াদকে বাদ দিয়ে নিজের মতো করে ইয়েমেনে প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। সূত্র : পার্সটুডে
ঢাকা স্কাইনিউজ/এস এম দৌলত