সুধী,
সম্বোধনটা কি একটু পুরনো ধাঁচের শোনাল? হোক না, ক্ষতি কী! তোমার মতোই না হয় ব্যতিক্রম হোক তোমায় করা সম্বোধন। আজ তোমার জন্মদিন। আনন্দবাজার অনলাইন গুরুদায়িত্ব সঁপেছে, তোমায় নিয়ে লিখতে হবে। তুমি-আমি বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছি। যেমন, ‘কাদম্বরী’, ‘ইতি মৃণালিনী’, ‘শজারুর কাঁটা’, ‘গয়নার বাক্স’। তার পরেও ভাবছি, কোথা থেকে শুরু করা যায়? তুমি কি জান, তুমি আমার পছন্দের সহ-অভিনেতাদের এক জন? মঞ্চে যদি রেশমি সেন, ঋদ্ধি সেন হন, পর্দায় তুমি আর শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় থাকলে কাজ করে আমি বড় আরাম পাই। আবার তেমনই অতি মাত্রায় সজাগ থাকতে হয়।
কেন? তুমি অভিনয় দিয়ে চরিত্রগুলোকে বড্ড জীবন্ত করে দাও। যাঁরা তোমাদের সঙ্গে থাকেন তাঁরাও নিজে থেকেই তখন সজাগ হয়ে যান। আমার ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছে। তুমি অভিনয় দিয়ে সজাগ করে দিতে বলেই ‘ইতি মৃণালিনী’-তে তোমার আর আমার অর্থাৎ ‘চিন্তন আইয়ার’-এর রসায়ন এত ভাল পর্দায় ফুটে উঠেছিল। যা শুধুই সংলাপের আদানপ্রদানে সম্ভব নয়। তুমিও নিজেকে ভুলে কত সহজে ‘চরিত্র’ হয়ে যেতে পার! এটা কিন্তু সবাই পারেন না! এই প্রসঙ্গে বলি, তোমাকে আর তোমার মা মানে অপর্ণাকে নিয়ে অনেকেরই কৌতূহল। ‘ইতি মৃণালিনী’ করার সময় অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন, ছবিতে তুমিও আছ রিনাদি মানে অপর্ণা সেনও আছেন। কোনও দৃশ্যে অভিনয়ের দিক থেকে মা-মেয়ের সঙ্ঘাত বেধেছিল? আমি বলেছি, সঙ্ঘাত বাধার কোনও প্রশ্নই নেই। কারণ, রিনাদি নিজে বলেছেন, কঙ্কনা তাঁর থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী অভিনেতা।
তার জন্য তুমি যে মনোযোগী ছাত্রীর মতো সারা ক্ষণ গম্ভীর মুখে সেটে বসে থাকতে, কারও সঙ্গে কথা বলতে না— তা কিন্তু নয়। আড্ডা দিতে, ঠাট্টাতেও মাততে। পরিচালক ‘অ্যাকশন’ বললেই তুমি ‘চরিত্র’।
খুব মনে পড়ছে, ‘ইতি মৃণালিনী’র সেটে আমাদের আড্ডা। পর্দায় রসায়ন তৈরির জন্য রিনাদি আমাদের মিশতে বলেছিলেন। পর্দায় আমাদের একটি বিষয়ে মিল ছিল। মৃণালিনী আর চিন্তন কবিতা ভালবাসত। সেটে তাই আমরা একে অন্যকে কত কবিতা পড়ে শুনিয়েছি! পাশাপাশি, নাটক, ছায়াছবি নিয়েও নিজেদের মতামত দিতাম। রাজনীতিও বাদ যায়নি। তখন প্রথম অনুভব করতে পেরেছিলাম, তুমি, কী ভীষণ সমসাময়িক। যতখানি সরল ততখানিই সব বিষয়ে প্রাসঙ্গিক থাকো।
আজকের দিনে তোমার একটা গোপন রহস্য ফাঁস করি? কেউ জানে না, তুমি ঘোড়ার পিঠে চড়তে কী ভীষণ ভয় পাও! ওই একটি বিষয় দিয়েই তোমায় কাবু করা যায়। সুমন ঘোষের ‘কাদম্বরী’ ছবির শ্যুট চলছে ময়দানে। আমি ‘জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর’ আর তুমি ‘কাদম্বরী’। দু’জনে ঘোড়ায় চড়ে পাশাপাশি যাব। কেবল ওই একটি দৃশ্যে চরিত্রকে ছাপিয়ে বেরিয়ে এসেছিল কঙ্কনা সেনশর্মা। আতঙ্কে তোমার মুখ শুকিয়ে এতটুকু! তোমার ঘোড়ার সঙ্গে সহিসও ছিলেন। তবু যত ক্ষণ শট দিয়েছ তত ক্ষণ যেন সিঁটিয়ে ছিলে।
ইতি
কৌশিক
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা