চট্টগ্রামে আলোচিত মিতু হত্যা
চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার সাক্ষী মিতুর একই ভবনের বাসিন্দা উম্মে ফরহাদ আহমেদ সুরমা আদালতে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে পড়ে। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে আমার স্বামী ফোন করে আমাকে জানায়, মিতু ভাবি মারা গেছে। আমি লিফট থেকে নেমে দেখি মাহির। ও আমাকে বলে, আমার আম্মু মারা গেছে। সে তখন কান্না করছিল। তাকে ভবনের ভেতরে পাঠিয়ে আমি ওয়েল ফুডের সামনে যাই। দেখি মিতু ভাবি রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। গুলির চিহ্ন দেখি।’
মিতুর একই ভবনের বাসিন্দা সুরমা আদালতে আরও বলেন, ‘এরপর পুলিশ সুরতহাল করে। আমি সেখানে স্বাক্ষর করি। খুনের আগের রাতে এক প্রতিবেশীর বাসায় মিতু ভাবিসহ আমরা একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। আগের দিন রাতে আমাকে মিতু ভাবি ফোন করেছিলেন। ইন্টারকমে কল দেন। উনার কাছে এসএমএস আসে ছেলেকে আর্লি স্কুলে নিয়ে যেতে। উনি জানতে চান, আমার কাছেও এসএমএস এসেছে কিনা। আমি বলেছি, না আসেনি। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আমরা একই বাসায় ছিলাম। সেখানে খাওয়া দাওয়া করি।’
সোমবার চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার জব্দ তালিকার দু’জন এবং সিআইডি’র ব্যালাস্টিক এক্সপার্টসহ মোট চারজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। কোনো সাক্ষীর জেরা হয়নি।
চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ বলেন, মিতু হত্যা মামলায় চারজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীরা তাদের সামনে মামলার ডকুমেন্ট জব্দ করার কথা স্বীকার করেছেন। ব্যালাস্টিক এক্সপার্ট প্রতিবেদন শনাক্ত করেছেন।
এ নিয়ে মামলায় মোট ১৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আগামী ১৬ অক্টোবর মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।
সিআইডি’র ব্যালাস্টিক এক্সপার্ট আবদুর রহিম আদালতে তার সাক্ষ্যে বলেন, ‘২০১৬ সালের ৩০ জুন সিএমপি ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের কাছ থেকে পাওয়া স্মারকমূলে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি কাগজের বাক্সের ভেতর সিলগালা অবস্থায় আলামত পাই। আলামত হিসেবে সাত পয়েন্ট ৬৫ এমএম পিস্তলের দুটি অব্যবহৃত, একটি ব্যবহৃত ও একটি মিস ফায়ার হওয়া কার্তুজ, একটি পয়েন্ট ৩২ ক্যালিবারের রিভলবার, একটি দেশীয় রিভলবার পাই। পরে সবগুলোর ব্যালাস্টিক পরীক্ষা করি। এসব আলামতের রিপোর্ট ও রাসায়নিক প্রতিবেদন পরীক্ষা শেষে জমা দেই।’
ফল দোকানের কর্মচারী আবদুর রহিম তার সাক্ষ্যে বলেন, ঘটনার দিন সকালে দোকান খুলতে গেলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও জড়ো হওয়া লোকজন দেখতে পাই। রাস্তার উপর এক মহিলাকে সন্ত্রাসীরা মেরে চলে যান। সেখান থেকে পুলিশ তিনটি গুলি, একটি গুলির খোসা ও এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করে জব্দ তালিকা করে। আমাকে সাক্ষর করতে বলায় আমি সাক্ষর করি।’
আরেক সাক্ষী কস্টেবল রনিতা বড়ুয়া বলেন, ‘ঘটনার দিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে এসআই ত্রিরতন বড়ুয়া ফোন করে বলে জিইসি মোড়ে একটা মরদেহ আছে। ওখানে যেতে। আরও দু’জন পুলিশ সদস্যসহ সেখানে যাই। ওখানে গিয়ে দেখি, ওয়েল ফুডের সামনে কালো বোরকা পরা একটি মরদেহ পড়ে আছে। এসআই ত্রিরতন বড়ুয়া সুরতহাল করেন। জব্দ তালিকা করেন। তাকে সহযোগিতা করি।’
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। সেই মামলায় পিবিআই বাবুল আক্তারকে প্রধান অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।