গুম হওয়া সন্তানের মায়ের অশ্রুসজল আকুতি
অসহায় মায়ের আর্তি, ‘আমার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনো প্রতীক্ষায় আছি। একমাত্র ছেলে ফিরে আসবে মায়ের কোলে। মা বলে জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু সেই প্রতীক্ষা যেন আর শেষ হয় না।’ রাজধানীর তিতুমীর কলেজের ফাইন্যান্স বিভাগের ছাত্র আবদুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী কান্নায় চোখ ভিজিয়ে কথাগুলো বলছিলেন। মাসুমের মায়ের প্রশ্ন-‘এ প্রতীক্ষার অবসান কি কখনো হবে না? আমার ছেলে কি ফিরবে না? যদি ছেলে বেঁচে না থাকে তা হলে তার কবরের সন্ধান দিন।’ অঝোরে কান্নার সময় আয়েশা আলীর নাক দিয়ে এক পর্যায়ে রক্ত বের হয়ে আসে।
বুধবার সকালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এভাবেই গুমের শিকার সন্তানের ফিরে না আসার কথাগুলো বলছিলেন মায়েরা। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ।
অনুষ্ঠানে গুমের শিকার হওয়া স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আকুতিই ছিল সবার মুখে। তারা তাদের স্বজনের সঙ্গে বাঁচতে চান; তাদের দেখা পেতে চান। অনেক শিশু তার বাবার সঙ্গে খেলাধুলা করতে চায়। বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে এভাবেই নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন।
গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, আজকে এত বছর হয়ে গেল দুই নাতিন নিয়ে আছি। ছেলের কোনো খোঁজ পাই না। আপনারা দোয়া কইরেন, মরার আগে যেন আমার ছেলেকে দেখে যেতে পারি।’
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের বুকে ঝোলানো ছিল নিখোঁজ স্বজনের ছবি। আবার কারও বুকে সন্তানের ছবি, কারও বুকে বাবার ছবি; কারও বুকে ভাইয়ের ছবি। অনুষ্ঠানে নিজেদের দুঃসহ কষ্টের কথা তুলে ধরেন তারা। কারও মা, কারও সন্তান, কারও বোন ঘটনার কষ্টকর বর্ণনা দেন। তারা প্রতিটি ঘটনাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ করেন।