করোনা বিপর্যয়ের মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে একে একে চারটি রেকর্ড হয়েছে বাংলাদেশের। জুন মাসের শুরুতে ৩৩ বিলিয়ন ডলার থেকে রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের অংক গিয়ে ঠেকেছে ৩৭.১০ বিলিয়ন ডলারে।
এর আগে গত ৩০ জুন প্রথমবারের মতো ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল। করোনা সঙ্কটের মধ্যে সামগ্রিকভাবে প্রবাসীরা খারাপ অবস্থায় থাকলেও বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে। একই সঙ্গে প্রচুর বৈদেশিক ঋণও আসছে। আমদানি কমে যাওয়ায় এবং বৈদেশিক চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে রিজার্ভ বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তার কারণে এখন প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এতে করে ব্যাংকিং চ্যানেলে এভাবেই রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলতি মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসীরা ২২৪ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। এর আগে কখনো এক মাসেও এত অর্থ আসেনি। এতদিন একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড ছিল গত জুনে। ওই মাসে প্রবাসীরা ১৮৩ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান। তার আগে এক মাসে সর্বোচ্চ ১৭৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড ছিল ২০১৯ সালের মে মাসে। আর সঙ্কটের মধ্যেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় যা ১৭৯ কোটি ডলার বা ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।
করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা থেকে প্রচুর ঋণ পেয়েছে সরকার। মুদ্রা সরবরাহ এভাবে বাড়লেও গত অর্থবছর ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ আমদানি কমে ৫ হাজার ৫৯ কোটিতে নেমেছে। অবশ্য রপ্তানি ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ কমে ৩ হাজার ২৮৩ কোটি ডলারে নেমেছে।
গত জুন মাসে রিজার্ভে একে একে তিনটি রেকর্ড অতিক্রম করে। মাসের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। তবে ৩ জুন প্রথমবারের মতো ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। একের পর এক রেকর্ড হয়ে ৩০ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়ে যায়।
আজ মঙ্গলবার তা ৩৭ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করলো। এর আগে সর্বশেষ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল ২০১৭ সালের জুনে। তারপর দীর্ঘদিন রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে উঠানামা করছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠালে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া অব্যাহত আছে। আবার বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় হুন্ডি পথে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ব্যাপক কমেছে। কেননা সাধারণত অর্থ পাচারকারী প্রবাসীদের থেকে অবৈধ চ্যানেলে ডলার কিনে এখানে সুবিধাভোগীর হাতে টাকা পৌঁছে দেয়। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এখন সব দেশেরই খারাপ অবস্থা। যে কারণে হুন্ডি পথে ডলারের চাহিদা কমেছে। আগে যারা অবৈধ উপায়ে অর্থ পাঠাতেন তাদের অনেকেই এখন ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন।