করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এর মূলমন্ত্র নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আইসোলেশন করা। একই সঙ্গে তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা। নির্দিষ্ট এলাকায় সংক্রমণ অধিক মাত্রায় ছড়ালে কার্যকর লকডাউন করে ওই এলাকায় চলাচল নিষিদ্ধ করে দেওয়া। অর্থাৎ, ওই এলাকা থেকে কেউ বাইরে বের কিংবা প্রবেশ করতে পারবেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী, নূ্যনতম ২১ দিন সেই অবস্থা স্থায়ী রাখতে হবে। এই সময়ে ওই এলাকার সব মানুষের নমুনা পরীক্ষা করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশন ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। প্রয়োজন হলে তাদের সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত সফল হওয়া দেশগুলো এই পদ্ধতিই অবলম্বন করেছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অবলম্বন না করায় বাংলাদেশে ভাইরাসটি ব্যাপকমাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সারাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন পৌনে এক হাজার মানুষ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানার পাশাপাশি কার্যকর লকডাউন ও কন্টাক্ট ট্রেসিং সঠিকভাবে না হওয়ায় ভাইরাসটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই মনে করেন, টোলারবাগ ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় এই কাজটি যথাযথভাবে করায় ওই দুই স্থানে সংক্রমণ বাড়েনি। কিন্তু অন্য এলাকার ক্ষেত্রে কাজটি যথাযথভাবে না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সুতরাং টোলারবাগ ও শিবচরকে মডেল ধরে সারাদেশে এই প্রক্রিয়া চালু করা গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এখনও সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
এ অবস্থায় গতকাল থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারসহ কয়েকটি এলাকার রেড জোনে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বর্তমানে জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যক্রমের সফলতা এটি বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে। ২৬ মার্চের মতো ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে চলাচলের সুযোগ দিলে এই পদ্ধতিও কাজে আসবে না। সুতরাং জোনভিত্তিক লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পক্ষে তারা মত দিয়েছেন।
কন্টাক্ট ট্রেসিং কী :বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কন্টাক্ট ট্রেসিং হচ্ছে একটি পদ্ধতি যা সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যবহার করা হয়। এটা সাধারণত যৌন রোগের ক্লিনিকে ব্যবহার করা হয়। সেখানে রোগীদের বলা হয়, তারা যেসব মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন, তাদের ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে বলা হয়। করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষেত্রে যেসব মানুষ দীর্ঘসময় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের স্বেচ্ছা আইসোলেশনে যেতে বলা হয়। এটা সাধারণত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের ফোনের মাধ্যমে জানানো হয়। একই সঙ্গে একটি স্বয়ংক্রিয় লোকেশন ট্র্যাকিং মোবাইল অ্যাপও সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার না করায় এটি কার্যকর হচ্ছে না। সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, বর্তমানে দেশে রোগী থেকে সংক্রমণের হার ১ দশমিক ১৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী এই হার ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এপ্রিলের প্রথম দিকে দেশে এই হার ছিল দুই শতাংশের ওপরে। এরপর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই হার ১ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়ায়।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, রোগী থেকে সংক্রমণের হার ১ শতাংশের নিচে হওয়া মানে সংক্রমণের গতি কমতে থাকা। আর ১ শতাংশের ওপরে থাকা মানে মহামারি। বাংলাদেশে এখন রোগটি মহামারি অবস্থায় আছে বলেও জানান তিনি।
শিবচর ও টোলারবাগ যে কারণে সফল :দেশে করোনা সংক্রমণের পর শিবচর উপজেলাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়েছিল। করোনা সংক্রমিত ইতালি, গ্রিস, স্পেন, জার্মানিসহ ইউরোপ-আমেরিকার কয়েকটি দেশ থেকে মার্চের শুরুর দিকে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী ফিরেছিলেন। দেশে ৮ মার্চ প্রথম তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জনে পৌঁছায়। তাদের মধ্যে আটজনই ছিলেন শিবচরের। শিবচরে ইতালিফেরত একজনের শরীরে ১৩ মার্চ করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তার সংস্পর্শে থাকা পরিবারের আরও দু’জন সংক্রমিত হন। এরপর ধাপে ধাপে ওই উপজেলার আরও পাঁচজন আক্রান্ত হন। এর পর ১৯ মার্চ দেশের প্রথম এলাকা হিসেবে শিবচর লকডাউন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল পর্যন্ত এই শিবচরে মাত্র ৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এই এলাকায় নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। শিবচরের মতো রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগও শুরুতে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। গত ২১ ও ২২ মার্চ পর পর দু’দিনে এই এলাকায় করোনা আক্রান্ত দু’জনের মৃত্যু হয়। মার্চের শেষ সপ্তাহে আক্রান্ত ৩০ জনের মধ্যে নয়জনই ছিলেন টোলারবাগের। ২৩ মার্চ আইইডিসিআর টোলারবাগ এলাকাকে হটস্পট ঘোষণা করে। এর পরই ওই এলাকাটিকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। রাজধানী ঢাকায় এটিই প্রথম লকডাউন করা কোনো এলাকা। গত সোমবার পর্যন্ত এই এলাকায় মাত্র ২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যরা সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। নতুন করে কোনো সংক্রমণ হয়নি এই এলাকায়।
শিবচরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, সারাদেশে যখন ১৭ জন আক্রান্ত ছিল, তখন শিবচরেই ছিল আটজন। ইতালিফেরত একজনের মাধ্যমে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। পরে আরও সাতজন আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যক্তিরাও ছিল। এর পরই লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এই লকডাউনের মাধ্যমে এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে কিংবা বের হতে দেওয়া হয়নি। নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই এলাকায় সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, শিবচর এবং টোলারবাগ সারাদেশের জন্য আদর্শ হতে পারে। সংক্রমণের শুরুতে এই দুটি এলাকায় আক্রান্ত বেশি ছিল এবং প্রথম যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল, তারা টোলারবাগের বাসিন্দা ছিলেন। এর পরই দুটি এলাকাকে লকডাউন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আইইডিসিআরের পরামর্শ মেনে প্রশাসন এলাকা দুটিকে কার্যকরভাবে লকডাউন করে। কার্যকর লকডাউন ও কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে যে সুফল পাওয়া যায়, তার প্রকৃত উদাহরণ এই দুই এলাকা। কয়েক দিন ধরে এলাকা দুটিতে নতুন কোনো সংক্রমণ নেই। সুতরাং এই দুটি এলাকাকে আদর্শ ধরে সারাদেশে তা অনুসরণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে যেসব জেলা ও উপজেলায় এখনও আক্রান্ত পাওয়া যায়নি কিংবা সংখ্যায় কম আক্রান্ত আছে, সেসব এলাকায় কার্যকর লকডাউন করতে পারলে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে বলে মনে করেন তিনি।
যেভাবে পথ হারিয়েছে দেশ :কন্টাক্ট ট্রেসিং সঠিকভাবে না হওয়ায় সারাদেশে রোগটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন আইইডিসিআর কর্তকর্তারাও। ডা. এএসএম আলমগীর মনে করেন, ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্তের পর এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজটি ঠিক ছিল। মাঝখানে কিছুদিন সমস্যার কারণে তা করা হয়নি। এখন আবার ব্যাপকভাবে কাজটি করা হচ্ছে।
তবে কী কারণে কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজটি বন্ধ হয়েছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি ডা. আলমগীর। কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ে কয়েকটি জটিলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো মানুষ তথ্য লুকাতে চাচ্ছে। ল্যাব থেকে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানার পর অনেকে ফোন বন্ধ করে দিচ্ছে। আবার অনেকে বসবাসের ঠিকানাও পরিবর্তন করছে। এ কারণে তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের পাওয়া যাচ্ছে না।
ডা. আলমগীর বলেন, প্রথম দিকে একজন আক্রান্ত হলে তার কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে ৬০ থেকে ৭০ জন পর্যন্ত বের করেছি। কিন্তু এখন মানুষ সত্য না বলায় কন্টাক্ট ট্রেসিং জটিল হয়ে পড়েছে। স্মার্টফোন দিয়ে কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আক্রান্তদের একটি বড় অংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করে না। ফলে তার অবস্থানও নির্ণয় করা যায় না। তিনি আরও বলেন, ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটির পর যেসব করোনা পজিটিভ ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের অনেকেই স্বীকার করেনি যে বাইরে গেছেন বা বাইরে কত দিন ছিলেন। অসত্য বললে তারা কার সংস্পর্শে গেছেন তা বের করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন সমকালকে বলেন, ২৬ মার্চ ছুটি ঘোষণার পর মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে যান। আবার ঈদের ছুটিতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে আসা-যাওয়া করেছেন। অর্থাৎ, কিছু মানুষ সংক্রমিত এলাকা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামে গেছেন। এতে করে রোগটি গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন বাস্তব প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে তা বের করা খুব সহজ নয়। তবে যেসব এলাকায় রোগটি এখনও ছড়ায়নি, সেসব এলাকায় রোগী পাওয়া মাত্র ট্রেসিং করতে পারলে বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে।
কার্যকর লকডাউন ও ট্রেসিংয়ের বিকল্প নেই- মত বিশেষজ্ঞদের :কার্যকর লকডাউন ও ট্রেসিংই করোনা প্রতিরোধের একমাত্র মাধ্যম বলে মত দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ শুরুর দিকে এতটা তৎপর ছিল না। প্রথমে চীনের উহান থেকে ফিরিয়ে আনা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। এর পর বিদেশ থেকে আসা আর কাউকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়নি এবং তাদের মাধ্যমেই প্রথম সংক্রমণ শুরু হয়। ধাপে ধাপে তার পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী থেকে শুরু করে সবার মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন করা গেলে হয়তো রোগটির সংক্রমণ এড়ানো যেত। আবার শুরুর দিকে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন করা গেলেও ভাইরাসটি ছড়ানোর সুযোগ পেত না। এগুলোর কোনোটিই ঠিকমতো না হওয়ায় করোনা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
ড. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, বর্তমানে জোনভিত্তিক লকডাউন করার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারলে সুফল আসবে না। লকডাউন করা এলাকা থেকে কাউকে বের কিংবা ওই এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে ওই এলাকার সবার নমুনা পরীক্ষা করে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন করা গেলে ভালো ফল আসবে। সুতরাং এটি সরকারকে কঠোরভাবে বাস্তবায়নের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক সমকালকে বলেন, কার্যকর লকডাউনের বিষয়ে শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি। কিন্তু দেশে কখনোই কার্যকর লকডাউন হয়নি। ২৬ মার্চ ছুটি ঘোষণার পর ঈদের ছুটি মনে করে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে গেছেন। মাঝখানে গার্মেন্ট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা হলো। আবার গার্মেন্ট বন্ধ করা হলো। আবার ঈদ সামনে রেখে দোকানপাট খুলে দেওয়া হলো। সর্বোচ্চ সংক্রমণের এই সময়ে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও ছিল আত্মঘাতী। বর্তমানে ভাইরাসটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এখন জোনভিত্তিক যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে। তবে লকডাউনের পাশাপাশি ট্রেসিং করা এখানে জরুরি। একই সঙ্গে লকডাউন দেওয়া এলাকায় সবার নমুনা পরীক্ষাও করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
কর্তৃপক্ষের ভাষ্য :আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সমকালকে বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে লকডাউন হয়ে গেলে কিন্তু সবাই ঘরের মধ্যে থাকবে। তখন ট্রেসিং ততটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে না। সুতরাং ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন হওয়ার পর ট্রেসিংয়ের কাজটি আগের মতো ব্যাপকভাবে করা হয়নি। শুরুতে যেমনটি করা হয়েছিল টোলারবাগ ও শিবচরে। তবে রোগীর তথ্যগুলো আমরা সংগ্রহ করতাম। কিন্তু রোগী কার সংস্পর্শে গেছেন তা জানার তখন প্রয়োজন পড়েনি, কারণ তার ঘরের মধ্যেই থাকার কথা। হয়তো ঘরের মধ্যে ছিল না। বিষয়টি নজরে আসার পর আমরা আক্রান্ত ব্যক্তিকে ফোন করে তার তথ্য চাইলেও হয়তো সঠিকভাবে দেয়নি। যেমন কেউ বাইরে থাকলেও আমাদের জানিয়েছে, তিনি ঘরেই আছেন। আবার কারও কারও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, প্রযুক্তিগতভাবেও চেষ্টা করেছি। কিন্তু অনেকে অ্যানালগ ফোন ব্যবহার করায় ট্রেসিং করা যায়নি। আবার অনেকে ফোন বন্ধ করে রাখায় তাকেও ট্রেসিংয়ের আওতায় আনা যায়নি। এর বাইরে কার্যক্রমগুলো করতে যে জনবল প্রয়োজন তাও আইইডিসিআরের নেই। সুতরাং কাজটি একটু বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তবে বর্তমানে জোরালোভাবে কাজটি শুরু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।