ছেলে বেঁচে না থাকলে কবরের সন্ধান দিন

আগের সংবাদ

ছাত্রলীগ দু;সময়ে জাতির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

মা-ছেলের শিকলবন্দি জীবন

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২৩ , ৯:৩৫ অপরাহ্ণ

মা অন্ধ, ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মা রহিমা বেগমের কোমরের সাথেই তাঁর ১০ বছরের ছেলে আব্দুর রহমানের কোমরে বাঁধা রয়েছে শিকল। শিকলে ঝুলছে তালা। এভাবেই তারা ভিক্ষা করে বেড়ায়।

মঙ্গলবার তারা শহরে এসেছিল ভিক্ষা করতে। কিন্তু সন্ধ্যার পর মা রহিমা অসুস্থ হয়ে পড়লে আশ্রয় নেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখানে হাসপাতালের মেঝেতে শিকলবন্দি অবস্থায় মা–ছেলের শুয়ে থাকার দৃশ্যটি নজরে আসে হাবিব ওসমান নামে এক গণমাধ্যম কর্মীর। তিনি তাৎক্ষণিক দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করে রাত নয়টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপরই ছবিটি ভাইরাল হয়।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের অন্ধ রহিমা হতদরিদ্র ভ্যানচালক ছালাম হোসেনের স্ত্রী।

ফেসবুকে পোস্টটি দেখে রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। তিনি তাৎক্ষনিক মা–ছেলের জন্য শয্যা, কাপড়সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী হাবিব ওসমান জানান, এক সাংবাদিকের অসুস্থতার খবর শুনে কয়েকজন সাংবাদিক মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তারা দ্বিতীয় তলাতে উঠেই দেখেন মেঝেতে শিকলবন্দি অবস্থায় মা ও ছেলে শুয়ে রয়েছে। এ সময় মা রহিমা বেগম সাংবাদিকদের জানায়, তিনি অন্ধ, চোখে দেখেন না। তার একমাত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলেকে সাথে নিয়ে শহরে ভিক্ষা করে বেড়ান। তিনি জানান, তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী  শিশু সন্তান  হারিয়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কায় তার কোমরের সাথে শিকলবন্দি করে ছেলেকে আটকে রেখেছেন। আজকে ভিক্ষা করতে এসে একটু অসুস্থতা বোধ করায় তিনি এ হাসপাতালের মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, এসময়ে কোন শয্যা খালি না থাকায় তারা মেঝেতেই রাত কাটান। পরদিন বুধবার সকালে মা ও ছেলে বাড়িতে ফিরে যান।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক কৌশিক আহম্মেদ জানান, তিনি রাতে ছিলেন না। খবর নিয়ে জেনেছেন, ওই রাতে একজন নারী হাসপাতালের আশেপাশে ঘোরাঘুরির পর রাতে থাকার জন্য মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সকালে তারা চলে গেছেন।

অন্ধ রহিমা বেগম জানান, প্রায় ৮/৯ বছর আগে তাদের বাড়ীতে আগুন লেগেছিল। সেই আগুনে তিনি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান। সংসারের অভাব অনটনের কারণে তাকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হয়।

রহিমার স্বামী ভ্যানচালক ছালাম হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে সংবাদকর্মীরা তার বাড়িতে গেলে তাকে পায়নি। তিনি তার ভ্যান চালাতে বেরিয়ে গেছেন। তাঁর কোন মোবাইল ফোন না থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, মা ও ছেলের এক শিকলবন্দি থাকার দৃশ্যটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ওই পরিবারটির বেঁচে থাকার জন্য ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করবেন বলে জানান তিনি।