আমাদের ডেকে নেওয়া হয় এমপি সাহেবের বাসায়। এরপর এমপি সাহেব বলেন, তোরে না কইছি নিক্সনকে মাইরা আমার কাছে আসবি। তখন আমি এতে রাজি না হলে আমাকে গালাগাল করে। ক্রসফায়ার দেওয়ার ভয় দেখান এমপি ছোট মনির। নিক্সনকে মেরে আগে খবর দিবি, তোকে বড় পুরস্কার দেব।’
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে খুন হন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের হাদিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম তালুকদার নিক্সন। প্রায় তিন বছর পর ওই মামলার আসামি সুমনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে সুমনকে ওই কথাগুলো বলতে শোনা যায়।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সুমনের ভিডিও থেকে জানা গেছে, এই হত্যার সঙ্গে জড়িত টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির। তাঁর নির্দেশে সম্পন্ন হয় হত্যা মিশন। আসামি সুমন এমপি ছোট মনিরের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেও আসামি সুমন দাবি করেছিলেন, নিক্সনকে খুন করে তিনি এমপিকে ফোনে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুমনকে আদালতে হাজিরার সময় আদালতের হাজতখানা থেকে সুমনের বক্তব্যের ভিডিও করা হয়। এতে নিক্সন হত্যাকাণ্ডের অনেক তথ্য উঠে আসে। সুমন এখনও কারাবন্দি।
ভিডিওটি প্রায় সাত মিনিটের। সেখানে সুমনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি কিছু সত্য কথা বলতে চাই। আমি ইঞ্জিনিয়ার আজিজের সঙ্গে (এমপির ঘনিষ্ঠজন আজিজুর রহমান) এমপি সাবের দোতলার বাসার অফিসে যাই। তখন এমপি ছোট মনির আজিজকে উদ্দেশ করে গালি দিয়ে বলেন, ‘তোরে না কইছি তুই নিক্সনকে মাইরা আমার বাসায় আসবি। এ ছাড়া আসবি না। এরপর এমপি ছোট মনির বলেন, সুমন তুই নিক্সনকে শেষ করবি।’
সুমনকে বলতে শোনা যায়, ‘তখন আমি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলি, লিডার এই কাজ আমি করতে পারুম না। নিক্সনও আওয়ামী লীগ করে, আমিও করি। তখন ইঞ্জিনিয়ার আজিজও বলে সুমন তোকেই নিক্সনকে মারতে হবে। এক পর্যায়ে ছোট মনির বলেন, নিক্সনকে মারবি, নাইলে তোগো ক্রসফায়ারে দিমু। এই কথা বলে এমপি তার পিএস মাসুদকে বলেন মোবাইলটা দে তো, তখন তিনি কারও সঙ্গে কথা বলেন। এরপর আমার উদ্দেশে বলেন, জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকা। নিক্সনকে মারবি, নাইলে তোকে ক্রসফায়ারে দিমু।’
সুমন ভিডিওতে বলেন, এরপর বাসা থেকে বের হওয়ার উদ্যোগ নিলে এমপি সাব বলেন, আরও কথা আছে, যাইস না। তোদের যে আগে নিক্সনকে মাইরা আমাকে জানাতে পারবি, এতটুকু করতে পারবি, তোদের জন্য বড় পুরস্কার দেব। তখনও বলি লিডার আমি পারব না। এই সময়ে আজিজ ইঞ্জিনিয়ার রাজি হয়ে যায়। আমিও রাজি হই। তখন এপিএস মাসুদকে দিয়ে রুমের আলমারি থেকে প্লাস্টিকে মোড়ানো এক বান্ডিল টাকা দেওয়া হয় তাদের। বলা হয়– ‘আরও বড় পুরস্কার আছে।’ এ ব্যাপারে এমপি ছোট মনিরের বক্তব্য নেওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে কল করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।