বিদেশি ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্যক্ষেত্রে এপ্রিল ও মে মাসে জন্য এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের বিপরীতে সম্পূর্ণ সুদ মওকুফ সুবিধা পাবেন গ্রাহক। আর এক লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের বিপরীতে বার্ষিক ২ শতাংশ হারে এবং ১০ লাখ টাকার বেশি ঋণে এক শতাংশ হারে সুদ মওকুফ পাওয়া যাবে।
তবে একজন গ্রাহককে দুই মাসে সর্বোচ্চ ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত সুদ মওকুফ দেওয়া যাবে। সুদ মওকুফের টাকা সরকারের দেওয়া ২ হাজার কোটি টাকা থেকে ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সঙ্কটের মধ্যে গত এপ্রিল ও মে মাসের সব ধরনের ঋণের সুদ আদায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে গত ৩ মে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সব ধরনের ঋণে সুদ ‘সুদবিহীন ব্লকড হিসাবে’ স্থানান্তর করতে বলা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্লকড হিসাবে স্থানান্তরিত সুদ ব্যাংকের আয়খাতে না নিতে এবং গ্রাহক থেকে আদায় না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব সুদ কী করতে হবে সে বিষয়ে বুধবারের সার্কুলারে বিস্তারিত বলে দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যাংক ইতিমধ্যে গ্রাহক থেকে ভর্তুকিযোগ্য সুদ আদায় করলে তা ফেরত দিতে বলা হয়েছে সার্কুলারে।
স্থগিত সুদের একটি অংশ ভর্তুকি দিতে ব্যাংকগুলোকে সরকার ২ হাজার কোটি টাকা দেবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত ভর্তুকি হিসেবে সরকারের দেওয়া টাকা ব্যাংকগুলোকে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুরারে বলা হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড এবং ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ও এডি শাখা থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় দেওয়া ঋণ ছাড়া অন্যক্ষেত্রে এপ্রিল ও মে মাসে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণে ৯ শতাংশ হারে আরোপিত সম্পূর্ণ সুদ মওকুফ সুবিধা পাবেন গ্রাহক। এক লাখ টাকার বেশি তবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণে বার্ষিক ২ শতাংশ হারে মওকুফ পাবেন। এর মানে ৯ শতাংশের মধ্যে ভর্তুকি হিসেবে ২ শতাংশ দেওয়া হবে এবং গ্রাহককে দিতে হবে ৭ শতাংশ। আর ১০ লাখ টাকার বেশি ঋণে বার্ষিক এক শতাংশ হারে গ্রাহকপ্রতি সর্বোচ্চ ১২ লাখ টাকা মওকুফ পাবেন।
সুদ মওকুফের জন্য ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য নির্ধারিত ছকে আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে আবেদন করতে হবে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ভতুর্কির অর্থ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুদ ভর্তুকির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়ার পর গ্রাহক পর্যায়ে মওকুফ কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, গ্রাহকের নগদ প্রবাহ বিবেচনায় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্লকড হিসাবে স্থানান্তরিত সুদের বাকি অংশ ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন সময়ে মাসিক সমান কিস্তিতে আদায় করতে হবে। যেসব ঋণ হিসাবের মাসিক কিস্তি (ইএমআই) নির্ধারিত আছে বা ঋণ সমন্বয়ের তারিখ আগামী বছরের জুনের আগে সে-ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদ আদায় করা যাবে। চলমান ঋণের ক্ষেত্রে মওকুফঅবশিষ্ট আদায়যোগ্য সুদ অনুমোদিত সীমাতিরিক্ত লিমিট হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নবায়নের সময় ওই সুদ সমন্বয় করা যাবে।
মওকুফঅবশিষ্ট সুদ আদায়ের জন্য সুদবিহীন ব্লকড হিসাবে সংরক্ষণের পরিবর্তে ইন্টারেস্ট রিসিবেবল অ্যাকাউন্ট বা ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালার আলোকে আলাদা সংরক্ষণ করতে হবে। ওই সুদ বা মুনাফার ওপর ৩০ জুন পর্যন্ত কোনোভাবেই সুদ আদায় করা যাবে না। কোনো ঋণের বিপরীতে মওকুফযোগ্য সুদ ইতিমধ্যে আদায় করে থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে তা ফেরত দিতে হবে। আর ভবিষ্যতে নিরীক্ষার জন্য এ সংক্রান্ত কাগজপত্র আগামী ২ বছর ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হবে।
করোনাভাইরাসের সঙ্কট কাটাতে ঋণ গ্রহীতাসহ বিভিন্ন শ্রেণির জন্য নানা সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কেউ ঋণের কিস্তি না দিলেও তাকে খেলাপি না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে ব্যাংক যেন তারল্য সঙ্কটে না পড়ে সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর সিআরআর দেড় শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা বাস্তবায়নের সরাসরি তারল্যের যোগান দিতে বেশ কয়েকটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।