বাউফলে প্রফেসর ইব্রাহিম খলিলের বাবা ইন্তেকাল করেছেন

আগের সংবাদ

বিএনপি জনগণের রাজনীতি করে না : তথ্যমন্ত্রী

পরের সংবাদ

পদোন্নতি পাওয়া ৭ অতিরিক্ত আইজিপির বর্ণাঢ্য কর্মজীবন

ঢাকা স্কাইনিউজ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ৭:৪৭ অপরাহ্ণ

পুলিশের সাত অতিরিক্ত আইজিপিকে নতুন দায়িত্ব দিয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের সবাই বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১২তম ও ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
সদ্য ডিআইজি থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পাওয়া চার কর্মকর্তার মধ্যে- মো. হুমায়ুন কবিরকে পুলিশ সদর দপ্তরে, জামিল আহমদকে পুলিশ সদর দপ্তরে, ওয়াই এম বেলালুর রহমানকে রাজারবাগ পুলিশ টেলিকমের অতিরিক্ত আইজিপি এবং মীর রেজাউল আলমকে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল করা হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি ডিআইজি থেকে এই চার কর্মকর্তা অতিরিক্ত আইজিপি হন। এছাড়া সারদার প্রিন্সিপাল আবু হাসান মুহম্মদকে তারিককে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খানকে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান এবং হাইওয়ে পুলিশের মল্লিক ফখরুল ইসলামকে ঢাকা পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর করা হয়েছে।
কে কোন ব্যাচের কর্মকর্তা
নতুন দায়িত্ব পাওয়া ৭ কর্মকর্তার মধ্যে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তা হলেন- অতিরিক্ত আইজিপি জামিল আহমদ, মল্লিক ফখরুল ইসলাম, মো. হুমায়ুন কবির, আবু হাসান মুহম্মদ তারিক। আর ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা হলেন- ওয়াই এম বেলালুর রহমান, মীর রেজাউল আলম এবং মো. শাহাবুদ্দিন খান।
জামিল আহমদ: জামিল আহমদ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তা। কর্মজীবনে তিনি পাবনা, লক্ষীপুরে পুলিশ সুপার ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাও উপজেলায়। ২০০৭-২০০৮ সালে তিনি জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি থাইল্যান্ড ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২০১৭ সালের ৯মে এক প্রজ্ঞাপনে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (এডিজি) দায়িত্ব পান জামিল আহমদ। সেসময় তিনি ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান ছিলেন। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট সিআইডির ডিআইজি হিসেবে বদলি হন তিনি। সবশেষ পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি থাকা অবস্তায় তিনি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পান।
এল্লিক ফখরুল ইসলাম: ঢাকা পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টরের দায়িত্ব পাওয়া মল্লিক ফখরুল ইসলাম বর্তমানে হাইওয়ে পুলিশের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর অতিরিক্ত আইজিপি হন। ১৯৬৯ সালের ১৫ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলার এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৯১ সালের ২০ জানুয়ারি ১২তম বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০০৩ সালে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে ভোলা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ফেনী জেলার পুলিশ সুপার এবং ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশে ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি কমান্ডার হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুনাম অর্জন করেন। এরপর অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১২ সালে র‌্যাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৪ সালে ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সিটি এসবি ও ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
মো. হুমায়ুন কবির: বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ১৯৯১ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১৯ সালের এপ্রিলে তিনি রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন। সবশেষ তিনি ঢাকা পুলিশ স্টাফ কলেজের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত অবস্থায় পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত আইজিপি হন। মঙ্গলবারের প্রজ্ঞাপনে হুমায়ন কবিরকে পুলিশ সদও দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি করা হয়েছে। পুলিশে ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ বাংলাদেশ পুলিশ পদক ‘বিপিএম’ এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক ‘পিপিএম’ পেয়েছেন।
১৯৯১ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগ দেন হুমায়ুন কবির। চাকরীজীবনে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং লক্ষীপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরে ডিআইজি (ক্রাইম), রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পেয়েছেন। হুমায়ুন কবির জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
আবু হাসান মুহম্মদ তারিক: ১২তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ডিআইজি (এইচআর) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় আবু হাসান মুহম্মদ তারিক গতবছরের ১৭ জানুয়ারি অতিরিক্ত আইজিপি হন। পরের মাসের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি সারদার প্রিন্সিপাল হন। মঙ্গলবারের প্রজ্ঞাপনে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি করা হয়েছে।
ওয়াই এম বেলালুর রহমান: এ বছরের ২৫ জানুয়ারি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পান ওয়াই এম বেলালুর রহমান। তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তার গ্রামের বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার চরপাড়া গ্রামে। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে বেলালুর রহমান বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে এসএসসি, সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি, চট্টগ্রাম বিআইটি বর্তমান (চুয়েট) থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পুলিশ ক্যাডারে নির্বাচিত হন তিনি। সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় তার। তিনি এসএসএফ (পিএম অফিস), সিএমপি খাগড়াছড়ি, আরএমপি, খুলনা জেলার পুলিশ সুপার, রাজারবাগ টেলিকম, নওগাঁর পুলিশ সুপার এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
মীর রেজাউল আলম: মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার চৌগাছি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মীর রেজাউল আলম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচে বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগদান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই পুত্র সন্তানের জনক। পওে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত আইজিপি হন।
চাকরি জীবনে অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন দক্ষ ও পেশাদার এই পুলিশ কর্মকর্তা। অপরাধ দমনে কাজ করতে গিয়ে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কসোভো ও লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দেশের জন্য সম্মান ও গৌরব বয়ে আনেন। কর্মজীবনে স্বীকৃতি হিসেবে একাধিকবার ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ বিপিএম এবং আইজিপি ব্যাজ পেয়েছেন। মীর রেজাউল আলম ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রশাসন ও ট্রাফিক, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক, ক্রাইম অ্যান্ড অপস, অপারেশনস্ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. শাহাবুদ্দিন খান: অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খানকে হাইওয়ে পুলিশপ্রধানের দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে কর্মরত। ঝিনাইদহের শৈলকূপার হিতামপুরে জন্মগ্রহণ করা পুলিশের এই কর্মকর্তা গতবছরের জানুয়ারি মাসে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পান। এর আগে তিনি বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার ছিলেন। চাকরিজীবনে শাহাবুদ্দিন খান কুষ্টিয়া, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, রাজশাহী, মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার ছিলেন। এছাড়া তিনি ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন), র‌্যাব-৪, র‌্যাব-১০ ও র‌্যাব-১২ এর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একাধিকবার বসনিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শান্তি রক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন।