সন্তানদের ওপর অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন স্বামী হারা বৃদ্ধা সাজেদা বেওয়া (৬৫)। একযুগ আগে ৪ সন্তান রেখে মারা যান তার স্বামী যশমত আকন্দ। চার সন্তানের মধ্যে দুজন প্রতিবন্ধী।
দুই প্রতিবন্ধী সন্তানের একজন মারা গেছেন। আরেকজন প্রতিবন্ধী সন্তানসহ কষ্টে দিন পার করছিলেন সাজেদা। কেননা বাকি দুই সন্তান তাদের মা ও প্রতিবন্ধী ভাইয়ের দেখভাল করতেন না। জীবনের এসব কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অভিমানে দুবছর আগে ঘরছাড়া হন সাজেদা। পরিবারের লোকেরা তার খোঁজ করলেও কেউ খুঁজে পাননি।
বৃদ্ধা সাজেদার ভাতিজা আবু বকর সিদ্দিকী জেলার চৌগ্রাম কলেজের কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘গত প্রায় ১০-১২ বছর আগে তার ফুফা যশমত আকন্দ মারা যান। এরপর গত দুই বছর আগে এক দিন বাড়ি ছেড়ে চলে যান ফুপু। অবশেষে গত রোববার ঢাকায় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ওই বৃদ্ধাকে পান। ওই সময় প্রতিমন্ত্রী পলক তাকে ঢাকায় ডেকে নেন। তার সঙ্গে তার ফুপুকে নিজ গাড়িতে করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এ সময় ফুপুকে ২০ হাজার টাকা দেন পলক।’
বাড়িতে ফেরার পর ফুপু তার বাড়িতে রয়েছেন দাবি করে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তিন লাখ টাকা দিয়েছেন তার ফুপুর বাড়ি করে দেওয়ার জন্য। এ ছাড়া একটি গাভী দিয়েছেন। গতকাল সোমবার সকালে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসন তার ফুপুকে বিধবা কার্ড ও তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বামীর বাড়ির পাশেই ২ শতক ভূমি নির্ধারণ করে মাপজোখ করে দিয়েছেন। সেখানেই ফুপুর বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকদিন পর মাকে ফিরে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়েছে ফুপুর ওই প্রতিবন্ধী ছেলে। ওই ছেলেকে নিয়ে যাতে সুখে জীবনযাপন করতে পারেন সেই জন্য ওই ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির পাশেই একটি ছোটখাটো ব্যবসা খুলতে বলেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। ব্যবসার প্রয়োজনীয় মালামালসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকাও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী দেবেন বলে জানিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনায় সোমবার সকালেই তিনি বৃদ্ধার স্বামীর বাড়ির পাশে জায়গা নির্ধারণ করেছেন। এরই মধ্যে ঘর তৈরির ইট, বালি, সিমেন্ট ও রড নিয়ে আসা হয়েছে। শুরু হয়েছে কাজ।
এক মাসের মধ্যেই ওই বৃদ্ধার জন্য ঘর তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি জানান, বাড়ির নির্মাণ শেষ হলে সেখানে ওই বৃদ্ধা উঠবেন তার ছেলেকে নিয়ে। বাড়ির সঙ্গে ছোটখাটো একটা ব্যবসা করবেন। সেই জন্যও সহযোগিতা করবেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক।