গ্রামাঞ্চল। শব্দটি স্মৃতিপটে ভাসলেই ধানক্ষেত, বাঁশঝাড় কিংবা মেঠোপথের কথা মনে পড়বে সবার। শৈশবের গোল্লাছুট, কানামাছি কিংবা পুকুরে-নদীতে গোসলের কথাও মনে করিয়ে দেয়। সেই শৈশব পেরিয়ে যৌবন পেরুলেও গ্রামাঞ্চলের প্রকৃতির রূপ বদলায়নি। সেই ছায়ানিবিড় গ্রামগুলো আজও আগের মতোই মনোরম রয়েছে।
গ্রামে কখনো কাঠফাটা রোদ, কখনো নীল আকাশ আবার কখনো কালো মেঘে আচ্ছন্ন থাকে প্রকৃতি। প্রকৃতির এই রূপবদল গ্রামগুলোর সৌন্দর্যও পাল্টে দেয়। বাংলার বর্ষপঞ্জিতে এখন বৈশাখ মাস চলে। এ মাসে সকাল কিংবা ক্লান্ত দুপুর, বিকেল কিংবা সন্ধ্যাবেলা, প্রহরে প্রহরে পাল্টে যায় দৃশ্য।
কখনো আকাশজুড়ে কালো মেঘের রাজত্ব। বাতাসে যে মেঘের গতিপথ ক্রমেই রূপ বদলায়। সেই মেঘের সাথে তাল মিলিয়ে গ্রামের রূপও বদলায়। মেঘ মিতালির ভেলা শেষে প্রকৃতিজুড়ে এক পশলা বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির পরেই রৌদ্র আসে। এই রৌদ্রের আভায় নীল আকাশে রংধনুর দেখা মিলে। রংধনুর সাতরঙে গ্রামগুলো রঞ্জিত হয়।
শুধু তাই নয় গ্রামের বিস্তর ধানক্ষেত, আম- লিচু আর মৌসুমি ফুলে-ফলে মুগ্ধতা ছড়ায় প্রকৃতি। গ্রামের অবারিত মাঠ জুড়ে গ্রীষ্মের সোনালি ধানের খেলা।
করোনার এই সময়কালে শহুরে ব্যস্ততার সাথে গ্রামীণ মানুষগুলোরও ব্যস্ততা কমেছে। মানুষের কর্মহীনতার এই সময়ে প্রকৃতি নিজের হয়ে আবিভূর্ত হয়েছে। তাইতো ক্ষণে ক্ষণে বৈশাখী ঝড় কৃষকের মনে ভয়ের সাথে স্বস্থির বার্তা বয়ে আনছে।
তাই এই সময়ে প্রকৃতিকে বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। মনের গতি-প্রকৃতিও কেমন কাব্যময় হয়ে ওঠে। এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলে, ভূমি ভিজে উঠলে, মাটির সোঁদা গন্ধে আমরাও কেমন ভিজে উঠি। এই সময়টায় গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে থাকলে যত দূর চোখ যায়, নিবিড় সহজ সবুজ দেখা যায়। সকালের সূর্যিমামার আলোয় সোনালি ধানগুলো জ্বলতে থাকে। কৃষক ধানক্ষেতের সান্নিধ্যে এসে বুক ভরে শ্বাস নেয়। এতেই তাদের স্বস্তি।
দিন পেরিয়ে পশ্চিম আকাশের লালচে সূর্য্যের আলো আরও মুগদ্ধা ছড়ায়। রাতেরবেলা বাঁশবাগানের উপর চাঁদের আলো গ্রামগুলোকে জড়িয়ে রাখে। এ সময় গ্রামের মায়েরা ছোট শিশুকে চাঁদ মামা দেখায়। আর থলেতে থাকা ভাতগুলো খাওয়াতে থাকে। চাঁদ মামার গল্পে ছোট শিশুটি মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে।
গ্রীষ্মের এই দিনগুলোতো তাই মনে পড়ে হৈমন্তী শুক্লার গাওয়া ভারি মিষ্টি গানটা ‘ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না, এই মেঘলা দিনে একলা। এসব মিলে বাংলার গ্রামগুলো যেন স্বর্গের লীলাভূমি।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।