যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হওয়ার পর দেশটির নতুন সরকার পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসবে বলে রাজনৈতিক মহল আশা করেছিল। কিন্তু ইরান চায় পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইরানের ওপর থেকে অন্যায় নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে হবে এবং এটা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব।
মার্কিন নয়া সরকারের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ইরানের ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং তারা আগের মতোই ইরান বিরোধী ভিত্তিহীন দাবি ও অভিযোগ অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘনের জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেছেন। তার এ বক্তব্যের পরপরই মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কোরবি ভিত্তিহীন অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে দাবি করেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে আমদের মিত্রদের জন্য ইরান এখনো হুমকি। মার্কিন কর্মকর্তাদের এসব বক্তব্যের ব্যাপারে ইরানের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রই পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করেছে, করোনা পরিস্থিতিতেও ইরানে ওষুধ আমদানিতে বাধা দিচ্ছে এবং পরমাণু সমঝোতা বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে। এ অবস্থায় পরমাণু সমঝোতা রক্ষায় কোন দেশ আগে পদক্ষেপ নেবে সে প্রশ্ন তুলে জাওয়াদ জারিফ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির ব্যর্থতার কথা আশা করি ভুলে যাবেন না।
ট্রাম্পের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচী এবং দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে দুর্বল করা কিন্তু তিনি সফল হননি। বরং ইরান আগের চেয়ে আরো শক্তিশালী হয়েছে। এমনকি সন্ত্রাসবাদ বিষয়েও মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। খ্যাতনামা মার্কিন চিন্তাবিদ নোয়াম চমস্কি রাশা টুডেকে দেয়া সাক্ষাতকারে যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদের প্রধান হোতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ইরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপের পেছনে এমন কিছু মহলের হাত রয়েছে যারা পরমাণু সমঝোতা থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার আগে থেকেই এ সমঝোতাকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। ইরানের বিরুদ্ধে তারাই ট্রাম্পকে প্ররোচিত করেছিল। যদিও বর্তমান বাইডেন প্রশাসন পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসার কথা বলছেন, কিন্তু তারা এ ব্যাপারে ট্রাম্পের নীতিতেই অটল রয়েছে এবং ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরমাণু সমঝোতা রক্ষার জন্য একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ঠিক এ বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, তেহরান যৌক্তিক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সামনে এখনো পরমাণু সমঝোতা রক্ষার সুযোগ রয়েছে। সূত্র : পার্সটুডে