গত ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিদায় নিয়েছেন এবং জো বাইডেনের নেতৃত্বে নতুন মার্কিন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। পশ্চিম এশিয়ার ব্যাপারে ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রনীতির কারণে বহু সংকট তৈরি হয়েছে।
নতুন মার্কিন প্রশাসনের দিকে এখন সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে এ কারণে যে সবাই গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখতে চাচ্ছে বাইডেন সরকার পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের প্রধান প্রধান সমস্যাগুলোকে কীভাবে দেখছে এবং সমাধানের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ট্রাম্প সরকার যাই করেছে ইসরাইলের পরামর্শেই করেছে। বাইডেন প্রশাসন কি ইসরাইলকে পাশ কাটিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে? দু:খজনকভাবে এর উত্তর হলো ‘না’। ইসরাইলের প্রতি অন্যসব মার্কিন সরকারের মতোই বাইডেন সরকারও প্রতিশ্রুতিবদ্ধই থাকবে। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের পার্থক্য হলো ট্রাম্প প্রশাসন পুরোপুরি ইসরাইলের সেবায় নিয়োজিত ছিল। সেইসঙ্গে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরাইলের আলোচনার পথও কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাইডেন সরকার ইসরাইলের প্রতি প্রতশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের উপায় নিয়ে অগ্রসর হতে পারেন এবং ট্রাম্পের সময়কার ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে এগুতে নাও পারেন। এর বাইরে বাইডেন ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ ও ইসরাইলের মধ্যে পুনরায় আলোচনার ব্যাপারে অগ্রসর হতে পারেন। মাহমুদ আব্বাস ইতোমধ্যে এই সংলাপের ব্যাপারে প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছেন।
আরেকটি বিষয় হ’ল ট্রাম্প প্রশাসনের মতো বাইডেন সরকারও ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিকী করণকে স্বাগত জানায়। তবে বাইডেন হয়তো ট্রাম্প প্রশাসনের মতো এ বিষয়ে আরব দেশগুলোর ওপর খুব বেশি চাপ নাও দিতে পারেন। ইসরাইলের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো সেন্টকমে তেলআবিবের সদস্যপদ। সেন্টকম হলো আমেরিকার সেন্ট্রাল কমান্ড। ট্রাম্প প্রশাসনের শেষ দিনগুলোতে ইসরাইল এই সেন্টকমের সদস্য হয়েছে। এখন পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা বিধানে সেন্টকমের সদস্য হিসেবে ইসরাইলও ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়টিকে বাইডেন প্রশাসনও কিন্তু স্বাগত ও সমর্থন জানিয়েছে। আরব দেশগুলোর ক্ষেত্রে বাইডেন সরকারের নীতিমালায় পরিবর্তন আসবে বলে মনে হচ্ছে। প্রথমত সৌদি আরবকে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য আরব দেশ থেকে পৃথক করা হতে পারে এবং ট্রাম্প সরকারের নীতির বিপরীতে সৌদি আরবের ব্যাপারে বাইডেনের আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি আরও কঠোর হতে পারে। তার একটি লক্ষণ হলো কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে, সৌদিআরবের ভিন্ন মতাবলম্বি সাংবাদিক জামাল খাশোগি’র নির্মম হত্যাকাণ্ডের মামলাটিকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হবে। সুতরাং এই ধারণা পোষণ করা যায় যে সৌদিআরব ট্রাম্প সরকারের সময় যেভাবে পশ্চিম এশিয়ায় নিজস্ব নীতি ইচ্ছেমতো বাস্তবায়িত করেছিল সেভাবে এখন হয়তো আর পারবে না। এর মানে এই নয় যে বাইডেন সরকার সৌদি আরবকে ত্যাগ করবে, কেননা সৌদি আরব পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার প্রধান মিত্র।
বাইডেন সরকার তাদের মধ্যপ্রাচ্য নীতির অংশ হিসেবে চেষ্টা করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এমনকি সৌদি আরবসহ তার মিত্রদের ব্যবহার করে বিশেষ করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি আঞ্চলিক জোট গড়ে তুলতে। এ অঞ্চলে ইরান যাতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা না পায় কিংবা ইরানকে যেন অন্যান্য আরব দেশ সমর্থন না করে সেই লক্ষ্যেই এই প্রতিরোধের চেষ্টা করা হবে।
সর্বোপরি বাইডেন সরকার হয়তো মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের জ্বেলে দেওয়া আগুনে এখনই ঘি ঢালার চেষ্টা করবেন না। কেননা তিনি জানেন এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁকে বেশ কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। সূত্র : পার্সটুডে