মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের মে মাসে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নজিরবিহীন ও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন দাবি করেছেন, আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হতে পারলে পরমাণু সমঝোতায় ফিরে যাবেন। জো বাইডেনের এ ঘোষণার ব্যাপারে ইরান প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ স্পুতনিক বার্তা সংস্থাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ ব্যাপারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু সমঝোতায় যদি ফিরে আসতে চায় তাহলে তাদেরকে অবশ্যই কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের যে ক্ষতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তা পুষিয়ে দিতে হবে এবং পরমাণু সমঝোতাকে দুর্বল করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা থেকে সরে আসতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন গত মাসে এক বক্তৃতায় ইরানের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে যদি জিততে পারেন তাহলে তিনি ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও দেশটির আস্থা অর্জনের জন্য কূটনৈতিক পন্থা অবলম্বন করবেন। জো বাইডেন সম্প্রতি আরও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে অনেক বড় ভুল করেছেন যা ছিল মার্কিন জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এবং এর পরিণতিতে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়েছে।
এদিকে সাবেক মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কমিশনের উপদেষ্টা এন্থনি ব্লিঙকেন বলেছেন, ইরান যদি পরমাণু সমঝোতায় পুরোপুরি ফিরে আসে তাহলে জো বাইডেনও নির্বাচিত হলে এ সমঝোতায় ফিরে আসবে। তখন আমরা আমাদের মিত্র ও শরিকদের সহযোগিতায় পরমাণু সমঝোতাকে আরও শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদী করার চেষ্টা করব।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির ব্যর্থতা সম্পর্কে জো বাইডেনের স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যায় এমনকি শীর্ষ মার্কিন রাজনীতিবিদরাও স্বীকার করেন যে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির নীতি কার্যত ব্যর্থ হয়েছে এবং ইরানবিরোধী আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার জন্য ওয়াশিংটনের চেষ্টাও কোন কাজে আসেনি। বরং ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসার ব্যাপারে জো বাইডেনের আগ্রহ থেকে বোঝা যায় তিনিও ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে বিরাজমান উদ্বেগ দূর করতে চান। এতে বোঝা যায়, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে ট্রাম্পের সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গির খুব একটা পার্থক্য নেই বরং বাইডেন একটু ভিন্ন কৌশলে ইরানের ব্যাপারে তার নীতি বাস্তবায়ন করতে চান।
বাস্তবতা হচ্ছে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর গত ৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে তারা ইরানের বিরুদ্ধে নানান ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। এমনকি বারাক ওবামা সরকারও ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় সই করলেও তেহরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে তিনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন থেকেও তিনি বিরত থেকেছেন। ওবামা প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকারী জো বাইডেন দাবি করেছেন আসন্ন নির্বাচনে তিনি জিততে পারলে পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসবেন। একই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন মিত্র দেশগুলোর সহযোগিতায় তিনি পরমাণু সমঝোতায় ইরানের জন্য আরো বেশি সীমাবদ্ধতা আরোপের পাশাপাশি এটিকে দীর্ঘমেয়াদে নবায়নের চেষ্টা করবেন। এছাড়া তিনি ইরানের ব্যাপারে আমেরিকার কিছু উদ্বেগের বিষয়েও বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
প্রকৃতপক্ষে জো বাইডেন পরমাণু সমঝোতার পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে শুধু যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে আরো বেশি সীমাবদ্ধতা আরোপের চেষ্টা করবেন তাই নয় একইসঙ্গে ওবামার মত তিনিও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি, পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের নীতি এবং দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়টিকে পরমাণু সমঝোতায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করবেন। তবে ইরান বহুবার বলেছে তারা কেবল পরমাণু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি, পশ্চিম এশিয়ার ঘটনাবলীতে ইরানের নীতি কিংবা মানবাধিকারের মত বিষয়গুলোতে ওয়াশিংটনের দাবির কাছে মাথা নত করবে না তেহরান। সূত্র : পার্সটুডে